সময়টা হিজরীর অষ্টম বছর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে বসে আছেন। হঠাৎ করে একটি ১০ থেকে ১৫ জনের বেদুঈন প্রতিনিধিদল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা করতে আসলেন। তারা মূলত ছিলেন আব্দুল কায়েস গোত্রের লোক, যারা বাহরাইন থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা দেখা করতে এসেছেন। আর এই গোত্রটি এমন একটি গোত্র যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিতে কখনও কাওকে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনুষ্ঠানিক ভাবে পাঠাননি। তারা অনেকটা লোকমুখে শুনেই ইসলাম গ্রহণ করেছিল। আর ইসলাম গ্রহণ করার পরেই তারা মূলত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা করতে মদিনায় এসেছেন।
যেহেতু তারা প্রথমবারের মতো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা করতে এসেছেন তাই তারা খুবই আগ্রহী এবং উচ্ছসিত ছিলেন। তাদের অবস্থা এমন ছিল যে, তারা মসজিদে নববীর কাছে এসে তাদের উট গুলোকে না বেধেই, কাপড় পরিবর্তন না করে এবং হাত মুখ না ধুয়েই মসজিদে নববিতে ঢুকে গেলেন। এবং এক প্রকার তাড়াহুড়ো করে সবাই একসাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা করলেন। যেহেতু তারা বেদুঈন ছিল তাই তাদের আচরণ কিছুটা এমনই বলা যায়।
কিন্তু এর মধ্যে একজন ছিলেন ব্যতিক্রম। তার নাম হল, আল- আশাজ্জ যিনি মূলত আব্দুল কায়েস আল- আশাজ্জ নামেই পরিচিত। তিনি আর সবার মত তাড়াহুড়ো করেননি। তিনি প্রথমে তার উটটিকে ভালোভাবে বাঁধলেন, তারপর গোসল করলেন, অন্য আরেকটি জামা পড়লেন, যেই জামাটি তিনি শুধুমাত্র এইজন্যই এনেছিলেন যে, এটি পরে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা করবেন। তারপর আতর লাগলেন এবং মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা করলেন। তিনি যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কথা বলছিলেন তখনও তিনি যেই প্রশ্নগুলো করছিলেন সেগুলোও ছিল অন্যদের তুলনায় একটু গোছানো এবং হেকমত পূর্ণ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন:
"إِنَّ فِيكَ خَلَّتَيْنِ يُحِبُّهُمَا اللَّهُ الْحِلْمُ وَالأَنَاةُ " . قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَا أَتَخَلَّقُ بِهِمَا أَمِ اللَّهُ جَبَلَنِي عَلَيْهِمَا قَالَ " بَلِ اللَّهُ جَبَلَكَ عَلَيْهِمَا " . قَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي جَبَلَنِي عَلَى خَلَّتَيْنِ يُحِبُّهُمَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ
"তোমার মধ্যে দুটি উত্তম স্বভাব রয়েছে যা আল্লাহ পছন্দ করেন: ধৈর্য ও ধীর-স্থিরতা। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমিই কি এ অভ্যাস গড়ে তুলেছি, না আল্লাহ আমাকে এ দুটি অভ্যাসের উপর সৃ্ষ্টি করেছেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহই তোমাকে এ দুটি স্বভাবের উপর সৃষ্টি করেছেন। তখন তিনি বললেন, কৃতজ্ঞতা আদায় করছি সেই আল্লাহর যিনি আমাকে এমন দু’টি স্বভাবের উপর সৃষ্টি করেছেন, যাকে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল পছন্দ করেন।" [১]
যদিও এখানে বাংলায় 'الْحِلْمُ وَالأَنَاةُ' এর অর্থ ধৈর্য ও ধীর-স্থিরতা করা হয়েছে। কিন্তু মূলত এই দুটি শব্দের অর্থ ব্যাপক। কোনো কাজ চিন্তাভাবনা করে করা, সঠিক সময়ে সঠিক কথা সঠিকভাবে বলা, নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করা এবং প্রজ্ঞাসহকারে যেকোনো কাজ করা ইত্যাদি বিষয়গুলোও এই দুইটি শব্দ দ্বারা বোঝায়।
তাই আমরা মহান আল্লাহ তাআলার কাছে বিনীতভাবে দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের সকলকে এই উত্তম গুণ দুটি দান করেন। যা স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল পছন্দ করেন।
______
১. সুনানে আবু দাউদ, ৫২২৫| মুসনাদে আহমাদ ১৭৩৭৩|
যেহেতু তারা প্রথমবারের মতো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা করতে এসেছেন তাই তারা খুবই আগ্রহী এবং উচ্ছসিত ছিলেন। তাদের অবস্থা এমন ছিল যে, তারা মসজিদে নববীর কাছে এসে তাদের উট গুলোকে না বেধেই, কাপড় পরিবর্তন না করে এবং হাত মুখ না ধুয়েই মসজিদে নববিতে ঢুকে গেলেন। এবং এক প্রকার তাড়াহুড়ো করে সবাই একসাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা করলেন। যেহেতু তারা বেদুঈন ছিল তাই তাদের আচরণ কিছুটা এমনই বলা যায়।
কিন্তু এর মধ্যে একজন ছিলেন ব্যতিক্রম। তার নাম হল, আল- আশাজ্জ যিনি মূলত আব্দুল কায়েস আল- আশাজ্জ নামেই পরিচিত। তিনি আর সবার মত তাড়াহুড়ো করেননি। তিনি প্রথমে তার উটটিকে ভালোভাবে বাঁধলেন, তারপর গোসল করলেন, অন্য আরেকটি জামা পড়লেন, যেই জামাটি তিনি শুধুমাত্র এইজন্যই এনেছিলেন যে, এটি পরে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা করবেন। তারপর আতর লাগলেন এবং মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা করলেন। তিনি যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কথা বলছিলেন তখনও তিনি যেই প্রশ্নগুলো করছিলেন সেগুলোও ছিল অন্যদের তুলনায় একটু গোছানো এবং হেকমত পূর্ণ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন:
"إِنَّ فِيكَ خَلَّتَيْنِ يُحِبُّهُمَا اللَّهُ الْحِلْمُ وَالأَنَاةُ " . قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَا أَتَخَلَّقُ بِهِمَا أَمِ اللَّهُ جَبَلَنِي عَلَيْهِمَا قَالَ " بَلِ اللَّهُ جَبَلَكَ عَلَيْهِمَا " . قَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي جَبَلَنِي عَلَى خَلَّتَيْنِ يُحِبُّهُمَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ
"তোমার মধ্যে দুটি উত্তম স্বভাব রয়েছে যা আল্লাহ পছন্দ করেন: ধৈর্য ও ধীর-স্থিরতা। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমিই কি এ অভ্যাস গড়ে তুলেছি, না আল্লাহ আমাকে এ দুটি অভ্যাসের উপর সৃ্ষ্টি করেছেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহই তোমাকে এ দুটি স্বভাবের উপর সৃষ্টি করেছেন। তখন তিনি বললেন, কৃতজ্ঞতা আদায় করছি সেই আল্লাহর যিনি আমাকে এমন দু’টি স্বভাবের উপর সৃষ্টি করেছেন, যাকে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল পছন্দ করেন।" [১]
যদিও এখানে বাংলায় 'الْحِلْمُ وَالأَنَاةُ' এর অর্থ ধৈর্য ও ধীর-স্থিরতা করা হয়েছে। কিন্তু মূলত এই দুটি শব্দের অর্থ ব্যাপক। কোনো কাজ চিন্তাভাবনা করে করা, সঠিক সময়ে সঠিক কথা সঠিকভাবে বলা, নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করা এবং প্রজ্ঞাসহকারে যেকোনো কাজ করা ইত্যাদি বিষয়গুলোও এই দুইটি শব্দ দ্বারা বোঝায়।
তাই আমরা মহান আল্লাহ তাআলার কাছে বিনীতভাবে দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের সকলকে এই উত্তম গুণ দুটি দান করেন। যা স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল পছন্দ করেন।
______
১. সুনানে আবু দাউদ, ৫২২৫| মুসনাদে আহমাদ ১৭৩৭৩|
❤19👍1🔥1
■ আকিদাহর গুরুত্ব
আল্লাহ কুরআনের বড় একটি জায়গা স্বতন্ত্রভাবে এই আকিদাহর জন্য নির্ধারণ করেছেন, এর জন্য দীর্ঘ সময় দিয়েছেন, যেন এই আকিদা হৃদয়ের গভীরে ভালোভাবে বদ্ধমূল হতে পারে। মাক্কি জীবনের প্রায় পুরোটা অংশজুড়েই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া কোনো আয়াতের অবতারণা করা হয়নি। কেবল এ বিষয়েরই আলোচনা করা হয়েছে। কারণ, আকিদাহর মাধ্যমে অন্তর গঠনের ধারাটি ধীর ও শ্রমসাধ্য। কখনো কখনো এ কাজ করার জন্য এমন এক বিশাল পরিব্যপ্ত সময়ের প্রয়োজন পড়ে, যে সময়ে একটি মানবদেহ বেড়ে ওঠে।
‘আমি কুরআনকে ভাগ ভাগ করে অবতীর্ণ করেছি, যেন তা বিরতিসহ মানুষের সামনে পড়তে পারো। আর আমি তা ধাপে ধাপে নাযিল করেছি।’
[সুরা আল-ইসরা, ১৭ : ১০৬]
পৃথক অনুশীলন ও দীর্ঘ সময়ের যেমন প্রয়োজন, তেমনিভাবে শরিয়াতের সব বিধিবিধান প্রয়োগের জন্য আকিদাহ হৃদয়ের গভীরে ভালোভাবে গেঁথে যাওয়াও অপরিহার্য। আর এ কারণেই মদিনায় সাহাবা কিরামের অন্তরে আকিদাহ দৃঢ়ভাবে গেঁথে না-যাওয়া পর্যন্ত শরয়ি বিধান অবতীর্ণ হতে বিলম্ব হয়। আর আল্লাহ তো সাহাবা কিরামকে নিজ কুদরতের পর্দা বানিয়েছেন, তাঁদের হাতেই এই দ্বীনের বিজয় দিয়েছেন।
____
শাইখ ড. আবদুল্লাহ আযযাম
বই : আকিদাহর পরিশুদ্ধি
আল্লাহ কুরআনের বড় একটি জায়গা স্বতন্ত্রভাবে এই আকিদাহর জন্য নির্ধারণ করেছেন, এর জন্য দীর্ঘ সময় দিয়েছেন, যেন এই আকিদা হৃদয়ের গভীরে ভালোভাবে বদ্ধমূল হতে পারে। মাক্কি জীবনের প্রায় পুরোটা অংশজুড়েই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া কোনো আয়াতের অবতারণা করা হয়নি। কেবল এ বিষয়েরই আলোচনা করা হয়েছে। কারণ, আকিদাহর মাধ্যমে অন্তর গঠনের ধারাটি ধীর ও শ্রমসাধ্য। কখনো কখনো এ কাজ করার জন্য এমন এক বিশাল পরিব্যপ্ত সময়ের প্রয়োজন পড়ে, যে সময়ে একটি মানবদেহ বেড়ে ওঠে।
‘আমি কুরআনকে ভাগ ভাগ করে অবতীর্ণ করেছি, যেন তা বিরতিসহ মানুষের সামনে পড়তে পারো। আর আমি তা ধাপে ধাপে নাযিল করেছি।’
[সুরা আল-ইসরা, ১৭ : ১০৬]
পৃথক অনুশীলন ও দীর্ঘ সময়ের যেমন প্রয়োজন, তেমনিভাবে শরিয়াতের সব বিধিবিধান প্রয়োগের জন্য আকিদাহ হৃদয়ের গভীরে ভালোভাবে গেঁথে যাওয়াও অপরিহার্য। আর এ কারণেই মদিনায় সাহাবা কিরামের অন্তরে আকিদাহ দৃঢ়ভাবে গেঁথে না-যাওয়া পর্যন্ত শরয়ি বিধান অবতীর্ণ হতে বিলম্ব হয়। আর আল্লাহ তো সাহাবা কিরামকে নিজ কুদরতের পর্দা বানিয়েছেন, তাঁদের হাতেই এই দ্বীনের বিজয় দিয়েছেন।
____
শাইখ ড. আবদুল্লাহ আযযাম
বই : আকিদাহর পরিশুদ্ধি
❤6🔥1
ভাইদের সামনে খাবার পেশ করা প্রশংসনীয়। বর্ণিত আছে, আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন—আমার ভাইদের এক সা খাবার খাওয়ানোর জন্য জড়ো করা আমার কাছে একটি দাস মুক্ত করার চেয়েও প্রিয়। খাবিস (খেজুর ও ঘিয়ের মিশ্রণে তৈরি মিষ্টি) ও ভালো ভালো খাবার প্রস্তুত করে ইবরাহিম ও আল-আমাশকে খাইসামা দাওয়াত করে বলতেন—খাও, আমি কেবল তোমাদের জন্যই এগুলো বানিয়েছি। খাবার পরিবেশনের আদব হচ্ছে, এ জন্য অনুমতি নেয়ার দরকার নেই এবং অতিরিক্ত না-করে ঘরে যা আছে তা দিয়েই পরিবেশন করা। যা আছে তার সমস্ত কিছু দিয়ে পরিবেশন করাও একপ্রকার বাড়াবাড়ি।
____
ইমাম ইবনু কুদামাহ আল-মাকদিসি
বই : চরিত্রশুদ্ধি
____
ইমাম ইবনু কুদামাহ আল-মাকদিসি
বই : চরিত্রশুদ্ধি
❤10
ইসতিআনাহ (সাহায্যপ্রার্থনা) ও ইসতিগাসা (বিপদ থেকে উদ্ধার চাওয়া) : ইসতিআনা হলো, যদি কেউ গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ব্যতীত সত্তা) কাছে সাহায্য চায়, হে অমুক, আমাকে চাকরিটি দাও, তাহলে এটা শিরক। হাঁ, যদি সে বস, কর্মচারী বা এমন কেউ হয় যে জব পেতে সাহায্য করতে পারে, তবে ভিন্ন কথা। ইসতিগাসাহ হলো, কেউ সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে আর বলছে, হে অমুক (ফুলান) সাহায্য করো। সে দুটো জিনিস বলতে পারে—হে আল্লাহ বা হে অমুক। উপস্থিত কারও কাছে সাহায্য চাইলে শিরক হবে না। একে বলে ফুলানের (অমুক) কাছে ইসতিগাসাহ। তাকে সাহায্য করাটা ফুলানের ক্ষমতাধীন। তবে ফুলান (কেউ) যদি মদিনায় থাকে আর সে বলে ‘হে অমুক, সাহায্য করো’, তাহলে আবার শিরক হয়ে যাবে।
____
শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল
বই— আকিদাহ তহাবিয়াহ
____
শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল
বই— আকিদাহ তহাবিয়াহ
❤4👍2